এই একটি পুষ্টি উপাদানই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে উল্লেখযোগ্যভাবে!

স্বাস্থ্য

সঠিক উপায়ে এই পুষ্টি উপাদানটি গ্রহণ করলে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে,এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে সাম্প্রতিক একটি বৃহৎ গবেষণা। তবে এটি কোনও যাদুকরী সমাধান নয়, বরং খাদ্যাভ্যাসে ভারসাম্য বজায় রেখে গ্রহণ করলেই কাজ করে নিঃশব্দ রক্ষকের মতো। গবেষকরা বলছেন, এখনই সাপ্লিমেন্টের দিকে না ছুটে, বরং পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্বটা উপলব্ধি করাই সবচেয়ে জরুরি।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে এখনও শীর্ষে রয়েছে কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগ। এই প্রেক্ষাপটে একটি খনিজ উপাদান, যেটি অনেক সময়ই পুষ্টিচর্চার আলোচনায় উপেক্ষিত থেকে যায়,সেই সেলেনিয়াম উঠে এসেছে হৃদস্বাস্থ্যের জন্য আশাজাগানিয়া উপাদান হিসেবে।

এটি কোনো হঠাৎ আলোচনায় আসা ট্রেন্ডি নিউট্রিয়েন্ট নয়। এবার গবেষণার ভিত্তি একটি বিশাল জনসম্পৃক্ত গবেষণা,২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এনএইচএএনইএস (NHANES) ডেটার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত, যেখানে অংশ নিয়েছিলেন ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ। ফলাফলে দেখা গেছে, খাদ্য থেকে সঠিক মাত্রায় সেলেনিয়াম গ্রহণ করলে হার্ট অ্যাটাকের মতো কার্ডিওভাসকুলার ঘটনার ঝুঁকি কমে যেতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য থেকে সেলেনিয়ামের গ্রহণ যতটা বাড়ে,এক নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি ততটাই কমে।এই ‘মিষ্টি সীমা’ হলো প্রতিদিন ৫৫ থেকে ১৪৫ মাইক্রোগ্রাম সেলেনিয়াম।

তবে এর মাত্রা যদি ১৩৫ মাইক্রোগ্রামের ওপরে চলে যায়, তখন এই উপকার ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে, এমনকি কখনও কখনও উল্টো প্রতিক্রিয়াও ঘটাতে পারে। অর্থাৎ, সেলেনিয়াম উপকারী, কিন্তু মাত্রার বাইরে গেলে হতে পারে বিপদজনক।

বেশিরভাগ গবেষণায় রক্তে সেলেনিয়ামের মাত্রা দেখা হলেও, খুব কম গবেষণাই প্রশ্ন করেছে,আমরা সেলেনিয়াম পাচ্ছি আসলে কোথা থেকে? অথচ আমাদের খাদ্য থেকে আসা সেলেনিয়ামের প্রায় ৮০% শরীরে শোষিত হয়।

প্রাকৃতিকভাবে সেলেনিয়াম পাওয়া যায়।ব্রাজিল নাটস (মিতভাবে), সূর্যমুখীর বীজ, হোলগ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার, ডিম ও মাছে। এনএইচএএনইএস-এর গবেষণায় পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে,খাদ্য থেকেই পাওয়া সেলেনিয়ামই প্রকৃত উপকারী, সাপ্লিমেন্ট থেকে নয়।

সেলেনিয়াম শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি গ্লুটাথায়ন পারঅক্সিডেজ (GPx) এবং থিওরেডক্সিন রিডাক্টেজ (TrxR)-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের অংশ,যেগুলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে কোষকে রক্ষা করে।
কম সেলেনিয়াম গ্রহণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা, হৃদরোগ সংক্রান্ত এনজাইমের দুর্বল কার্যকারিতা এবং কোষীয় ক্ষয়।

তবে, অতিরিক্ত সেলেনিয়াম গ্রহণ করলে শরীরে এমন কিছু যৌগ তৈরি হতে পারে যা ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই হৃদয় চায় সেলেনিয়ামের সাহায্য,কিন্তু পরিমিতি বজায় রেখে।

সবার জন্য সমান নয় এই উপকারিতা

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সেলেনিয়ামের হৃদরক্ষার প্রভাব সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। উচ্চ রক্তচাপ নেই এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সেলেনিয়াম গ্রহণের উপকারিতা ছিল বেশি। কিন্তু যাদের আগে থেকেই হাই ব্লাড প্রেশার আছে, তাদের ক্ষেত্রে সেলেনিয়ামের প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়নি।

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়,সব হৃদরোগ প্রতিকার সবার জন্য এক রকম নয়। লাইফস্টাইল, পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য অবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাস,সবকিছু মিলিয়েই নির্ধারণ করে, সেলেনিয়াম আপনার শরীরে কীভাবে কাজ করবে।

সেলেনিয়াম ও হৃদরোগের সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলছে। কিছু গবেষণায় কোনও উল্লেখযোগ্য উপকার মেলেনি, আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত সেলেনিয়াম হতে পারে ক্ষতিকর। বিশেষ করে যদি তা অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সঙ্গে ভারসাম্যে না থাকে কিংবা প্রাকৃতিক উৎস থেকে না আসে।

এনএইচএএনইএস-এর গবেষণার শক্তি ছিল এর বিশাল স্যাম্পল সাইজ ও বিশ্লেষণের পদ্ধতি। তবে এটি ছিল একটি ক্রস-সেকশনাল স্টাডি, যার ফলে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রয়োজন, যাতে স্পষ্ট বোঝা যায়,সেলেনিয়াম কীভাবে এবং কতটা হৃদয়কে সুরক্ষা দেয়।

সূত্র:https://tinyurl.com/yvb9snwh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *