৪১ বছর বয়সেই ৪৪ সন্তানের জননী, পিছনে রয়েছে আশ্চর্যজনক কাহিনী

আন্তর্জাতিক

উগান্ডার কাসান্দা জেলায় বসবাসকারী মারিয়াম নাবাতাঞ্জি, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘মামা উগান্ডা’ নামে পরিচিত, মাত্র ৪১ বছর বয়সেই ৪৪টি সন্তানের জন্ম দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন।

চিকিৎসকদের মতে, তিনি একটি বিরল জেনেটিক অবস্থায় ভুগছেন, যার নাম হাইপার-ওভুলেশন। এর ফলে প্রতিবার গর্ভধারণে তাঁর শরীরে একাধিক ডিম্বাণু তৈরি হয় এবং প্রতিবারই তিনি যমজ কিংবা তিন বা চার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এই অসাধারণ সংখ্যক সন্তান জন্মের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ও কঠিন জীবনসংগ্রাম।

মারিয়ামের জীবনে দুর্দশা শুরু হয় খুব অল্প বয়সেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় এক ২৭ বছর বয়সী পুরুষের সঙ্গে। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তিনি প্রথম সন্তান জন্ম দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবার বড় হতে থাকে তবে তা সাধারণ পরিবারের মতো নয়।

একাধিকবার যমজ, তিন সন্তান একসঙ্গে এবং তিনবার চার সন্তান একসঙ্গে জন্ম দেন তিনি। সব মিলিয়ে তাঁর মোট সন্তান সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ এ। বর্তমানে ৩৮ জন সন্তান জীবিত আছে, বাকি ৬ জন বিভিন্ন সময়ে মারা গেছে।

২০০৩ সালে তাঁর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। তখন বড় সন্তানদের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই মারিয়াম একাই সন্তানদের দেখাশোনা করছেন। মা, বাবা এবং অভিভাবকের ভূমিকায় তিনি একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি রুটি বিক্রি, চুল কাটা, ভেষজ ওষুধ বিক্রি যা পারেন সবই করেন। তিনি কখনো কারো কাছে সাহায্য চাননি, বরং নিজেই সন্তানদের শক্তি বলে মনে করেন।

বর্তমানে মারিয়াম ও তার সন্তানরা চার কামরার একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন। প্রতিদিন খাবার জোগাতে প্রায় ২৫ কেজি খাবার প্রয়োজন হয়। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে গিয়ে তিনি প্রায়ই আর্থিক সংকটে পড়েন।

তাঁর কয়েকজন বড় সন্তান ইতোমধ্যে তাকে সহযোগিতা করতে শুরু করেছে, কেউ টিউশন নেয়, কেউ ছোট চাকরি করে। তবুও এমন একটি পরিবারের দৈনন্দিন খরচ মেটানো সহজ নয়।

মারিয়ামের এই বিস্ময়কর জীবন কাহিনি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। অনেক সংবাদমাধ্যম তাঁর সংগ্রামের গল্পও প্রকাশ করেছে। ‘মামা উগান্ডা’ নামে তিনি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পরিচিত মুখ।

বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন তাঁর জীবনের অনন্য দিক তুলে ধরছে। তাঁর মতে, মাতৃত্ব মানে কেবল সন্তান জন্ম দেওয়া নয়, প্রতিদিন তাদের মানুষ করে তোলা।তিনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি শুধু চাই আমার সন্তানরা যেন শিক্ষিত হয়, ভালো মানুষ হয়। আমি সম্মান চাই, করুণা নয়।” এই বক্তব্যের মধ্যেই প্রতিফলিত হয় এক অসাধারণ নারীর সাহস ও আত্মবিশ্বাস।

মারিয়াম নাবাতাঞ্জির জীবন কেবল একটি নারীর ব্যতিক্রমী মাতৃত্ব নয়, বরং এটি এক মহীয়সী মায়ের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং অদম্য মানসিকতার প্রতীক। তাঁর কাহিনি আমাদের শেখায়, দারিদ্র্য বা একাকিত্ব কখনো একটি মায়ের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধকে থামিয়ে দিতে পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *