১৬৬ জনের দেহাবশেষ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে বিধ্বস্ত মহাকাশ ক্যাপসুল

আন্তর্জাতিক

দুইবার পৃথিবীকে সফলভাবে প্রদক্ষিণ করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৬৬ জন মৃত মানুষের ছাই বহনকারী একটি মহাকাশ ক্যাপসুল প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে। জার্মানির একটি স্টার্টআপ কোম্পানি ‘দ্য এক্সপ্লোরেশন কোম্পানি (TEC)’ এই ক্যাপসুলটি উৎক্ষেপণ করেছিল গত ২৩ জুন, ‘Mission Possible’ নামের একটি বিশেষ মহাকাশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে।

টেক্সাসভিত্তিক মহাকাশ অন্ত্যেষ্টি প্রতিষ্ঠান সেলেস্টিস (Celestis)-এর মাধ্যমে পাঠানো এই ক্যাপসুলে মৃতদের দেহভস্ম ছিল, যা কক্ষপথে প্রেরণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই ক্যাপসুলটিতে প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দেয় এবং সেটি পুনরায় পৃথিবীর দিকে ফিরে আসে। এরপর সেটি প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ে বিধ্বস্ত হয়।

কোম্পানির ব্যাখ্যা: সফল উৎক্ষেপণ, কিন্তু শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

এক বিবৃতিতে TEC জানায়, ক্যাপসুলটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়েছিল এবং কক্ষপথে নির্ধারিত উপায়ে পে-লোড পরিচালনা করে। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নিজেকে স্থিতিশীলও করেছিল। এমনকি পুনঃপ্রবেশের পর ‘ব্ল্যাকআউট’ কাটিয়ে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করেছিল। কিন্তু ঠিক মহাসাগরে অবতরণের কয়েক মিনিট আগে ক্যাপসুলটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে সংস্থাটি।

‘আমাদের যেসব ক্লায়েন্ট এই মিশনে বিশ্বাস রেখেছিলেন, তাদের কাছে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি,’—TEC এক বিবৃতিতে জানায়।

কোম্পানির সিইও হেলেন হুবি লিঙ্কডইনে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘আমরা সবাই সম্পূর্ণ সফলতা কামনা করেছিলাম। আংশিক সফলতাও ঝুঁকি নেওয়ার পথে একধরনের সঙ্গী। আমি এই ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি এবং ক্লায়েন্টদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’

সেলেস্টিস জানায়, এটি ছিল তাদের প্রথম মিশন, যেখানে মহাকাশে প্রেরণের পর ছাইগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ক্যাপসুলটি বিধ্বস্ত হওয়ায় ছাইগুলো সাগরের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, ক্যাপসুলগুলো আর উদ্ধার বা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

তবে এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘যদিও ক্যাপসুলগুলো উদ্ধার সম্ভব না, তবুও আমরা আশা করি পরিবারের সদস্যরা স্বান্ত্বনা পাবেন এই ভেবে যে, তাদের প্রিয়জনরা একটি ঐতিহাসিক যাত্রার অংশ হয়েছেন। মহাকাশে পাঠানো হয়েছে, পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন, এবং এখন প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতায় চিরনিদ্রায় শায়িত।’

শুধু ছাই নয়, ছিল আরও কিছু

প্রসঙ্গত, ক্যাপসুলটিতে শুধু দেহভস্মই ছিল না। একটি নাগরিক বিজ্ঞান প্রকল্প “Martian Grow”-এর অংশ হিসেবে গাঁজা গাছের উপাদান ও বীজও পাঠানো হয়েছিল মহাকাশে। এই গবেষণাটি মঙ্গলগ্রহে উদ্ভিদ চাষের সম্ভাবনা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *