ফ্যাসিস্ট রেজাউল করিম শোনালেন পালিয়ে যাওয়ার কল্প-কাহিনী, বেরিয়ে এলো অজানা তথ্য

রাজনীতি

ফ্যাসিস্ট হাসিনা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে দেশজুড়ে নারকীয় গণহত্যা চালিয়ে চোরের মত লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলে তার পদাঙ্কু অনুসরণ করে নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি-মন্ত্রীরাও একে একে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট ওবায়দুল কাদের কদিন আগে পালিয়ে যাওয়ার বানোয়াট সব কাহিনী শোনানোর পর এবার যেনো ঠিক একই পথে হাঁটলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলের সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও। এবার তিনি মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছেন তার পালিয়ে যাওয়ার কল্প-কাহিনী।

সম্প্রতি প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই সহচর তুলে ধরেন ৫ আগষ্টের পর তার পালিয়ে যাওয়ার চিত্র। তার দেওয়া তথ্যমতে, হাসিনা পালানোর দিন তিনি ন্যম ভবনে নিজ বাসায় পরিবারসহ অবস্থা করছিলেন। আগের রাতেও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হচ্ছিলো। ৫ আগষ্ট সকালে জানা যায়, ভবনের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হয়েছে। এদিন পরিস্থিতি এমন রূপ নেয় যে, তিনি বুঝতে পারেন ওই ভবনে তিনি একাই আছেন। স্ত্রী ও মেয়ে বারবার সতর্ক করলেও তিনি তখনও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি ভাবতাম প্রধানমন্ত্রী আছেন, নিশ্চয়ই তিনি পরিস্থিতি সামাল দেবেন। কিন্তু পরে বুঝলাম, ভবনটি প্রায় ফাঁকা। আমার স্ত্রী বলছিলেন, আশপাশে আর কেউ নেই। আমি তখনও বিষয়টি বিশ্বাস করিনি।”

রেজাউল করিমের দেওয়া তথ্যমতে, হঠাৎ এক অচেনা ছেলেকে দেখা যায় ছদ্মবেশে ভবনে ঢুকতে। পরে জানা যায়, সেই ব্যক্তি কোনো একসময় রেজাউলের সহায়তা পেয়েছিল। তার সহযোগিতায়, স্ত্রীসহ তিনি বেরিয়ে পড়েন তিনি। একদম সাধারণ পোশাকে, মাস্ক পরে, অসুস্থতার ভান করে বেড়িয়ে যান বাসা থেকে। এরপর আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাসায়। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ ছিলেন না তিনি। রেজাউলের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা ও পরিচিতজন এসে জানায়, তার মুক্তির জন্য ১২ কোটি টাকা দাবি করছে একদল অপহরণকারী। পরে দর কষাকষিতে ৫ কোটি টাকায় ‘ছাড় দেওয়ার’ প্রস্তাবও আসে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সেই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মব সৃষ্টির অভিযোগ করেন।

তবে, চরম মুহূর্তে রেজাউলের অফিসের এক পিয়ন মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে ত্রাতা হয়ে। সেসময় অপহরণকারীদের গাড়ি পেছনে ধাওয়া করছিল বলে দাবি করেন তিনি। পিয়নের সহযোগিতায় একটি গ্রামীণ এলাকায় গিয়ে লুকিয়ে থাকেন এই ফ্যাসিস্ট। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রেখে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সহায়তায় সীমান্তের দিকে রওনা দেন। একজন সাবেক এমপি ও তার ভাইয়ের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানেও তাকে কঠিন পরিস্থিতি পার করতে হয় বলেই এই সাক্ষাৎকারে জানান রেজাউল করিম।

তার ভাষায়, “ওই জায়গায় পৌঁছানোর পর যাদের মাধ্যমে সীমান্ত পার হতে হয়, তারা আগে টাকা ছাড়া কিছু করত না। কিন্তু আমার কাছে তখন কিছুই ছিল না। তাদের দয়াতেই হয়তো, আমাকে এক গাছবাগানের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কাদাময় পুকুরে প্রায় তিন ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম। তারকাঁটার আঘাতে শরীর ছিঁড়ে গিয়েছিল।” এরপর নাকি চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় তিনি সীমান্ত পার হন এবং ওপারে যোগাযোগ করে একজনের সহায়তায় একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। আর বাড়িটির মালিক ছিলেন বাংলাদেশের এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এমনটিই জানান সাবেক এই মন্ত্রী। পরে সেখান থেকে দলের কয়েকজন নেতার সহায়তায় তিনি কলকাতায় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।

আর কলকাতায় অবস্থানকালীন তিনি ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্টে অ্যারাইভাল সিল ও এক্সিট পারমিশন সংগ্রহ করে আরেকটি দেশে পাড়ি জমান, যদিও সেই দেশের নাম প্রকাশ করেননি। শ ম রেজাউল করিম বলেন, “পুরো অভিজ্ঞতা যেন স্বপ্নের মতো। মনে হয়েছে মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছি। প্রতিটি ধাপে আল্লাহর কুদরতের সহায়তা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।”

ফ্যাসিস্ট রেজাউল করিম তার পালিয়ে যাওয়ার কল্প-কাহিনী মানুষের কাছে শোনালেও সাধারণ মানুষ তার এইসব বিশ্বাস করছেন না। কয়েকদিন আগে ওবায়দুল কাদের শুনিয়েছিলেন বাথরুমে লুকিয়ে থাকার গল্প, যা নিয়ে রীতিমতো সামাজিক মাধ্যমে ট্রলের বন্যায় ছেয়ে যায় এর ওপর এবার কচুরিপানার নিচে কাদামাখা পানিতে চার ঘন্টা লুকিয়ে থাকার গল্প শোনালেন রেজাউল। যা ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *