আচ্ছা, বলেন তো—জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাংলার মাটিতে তারেক রহমানের চেয়ে গভীরভাবে আর কোন রাজনীতিবিদ ধারণ করেছেন?
কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য আমার নেই, কারণ হাসিনা রেজিমের পতনে কমবেশি সকলেরই ভূমিকা আছে। তবে তারেক রহমানের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব ও পাবলিক পারসেপশনের সূক্ষ্ম সাযুজ্যের প্রয়োজনে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।
জুলাই চেতনার বহুমাত্রিক প্রকাশ আছে। তবে বৈষম্যহীন, মানবিক ও সম্প্রীতিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন এ চেতনার কেন্দ্রে অবস্থান করে। ঠিক এ লক্ষ্যেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারেক রহমান। ৫ আগস্ট–পরবর্তী তার বক্তৃতা, বিবৃতি ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন, যা জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন। ৩১ দফায় ঘোষিত ‘রেইনবো নেশন’-এর ধারণায় শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বক্তব্য থাকতেই পারে, কিন্তু এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তারেক রহমান সবাইকে এক সূত্রে গাঁথতে চান।
আগস্ট বিজয়ের অব্যবহিত পরে, সম্ভবত ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল বৈঠকে আমরা কয়েকজন তার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বিভিন্ন ইস্যুতে পরামর্শমূলক আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে কিছু মহলের হঠকারী বা উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে করণীয় জানতে চাওয়া হলে তিনি ধৈর্য ও সংযমের পরামর্শ দেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছিল—বিএনপির বিরুদ্ধে ওঠা যে কোনো অভিযোগের জবাবে ‘ডিনায়াল মেথড’ ব্যবহার করতে নিষেধ করেন তিনি। তার বক্তব্য ছিল, ‘আমাদের দোষত্রুটি থাকতে পারে। কেউ ধরিয়ে দিলে আমরা স্বাগত জানাব; প্রয়োজনে আরও তথ্য জানতে চাইব, কিন্তু ঝগড়া বাধাব না। অভিযোগ সত্য হলে প্রতিকার করব।’ সংস্কার, সংশোধন ও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিতে তার কোনো সংকোচ নেই। জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য জনগণের ক্ষমতায়ন—এ বিষয়ে তারেক রহমানের উদারতা আমাকে বিস্মিত করেছে।
অনেকের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ক্ষমতার দাবিদার প্রায় সবাই কখনো না কখনো হঠকারী, আত্মঘাতী বা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। কারো আচরণে কূটনামি, বৈরিতা কিংবা অসহিষ্ণুতাও দেখা গেছে। তারেক রহমানের ক্ষেত্রে এ চিত্র আলাদা। তিনি কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ—মোটকথা দেশের উন্নয়ন নিয়েই কথা বলেছেন। তার কাছে সবার আগে বাংলাদেশ, দল বা ব্যক্তি নয়। এজন্যই তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক—একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।’ তিনি অবাস্তব কোনো স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না, বরং বলছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া—জনগণের জীবনযাত্রা একটু বেটার করা।’