ইরান-ইসরায়েল টানা ১৩ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন দেওয়া এই ভাষণে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
খামেনি তাঁর বক্তব্যে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের শত্রুরা ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক কর্মসূচিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। কিন্তু তাদের আসল লক্ষ্য হলো আমাদের আত্মসমর্পণ করানো। তিনি বলেন, “ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিন্তু আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করব না। এই জাতি আত্মমর্যাদার প্রতীক।”
মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলা প্রসঙ্গে খামেনি বলেন, এটি ছিল একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে যদি হুমকি অব্যাহত থাকে।
তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ছিল ট্রাম্পের রাজনৈতিক ‘নাটক’। তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে, কিন্তু খুব একটা সাফল্য পায়নি।
১৩ জুন রাতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে আকস্মিক হামলা চালায়। এতে তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক এলাকায় আঘাত হানে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার গোলাম আলি রশিদ ও অন্তত ১০ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ প্রায় ৬০০ জন নিহত হন।
এই হামলার জবাবে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস–৩’ শুরু করে। এতে তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ইসরায়েল ব্যাপক আর্থিক ও কৌশলগত ক্ষতির মুখে পড়ে।
এরই মধ্যে ২১ জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এর জবাবে ২৩ জুন রাতে ইরান কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তা নাকচ করে দেন।
পরদিন ২৪ জুন বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় মার্কিন ও ইরানি গণমাধ্যমসহ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকেও যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। এরপর ইরানের পক্ষ থেকেও তা নিশ্চিত করা হয়।