কুড়িল ফ্লাইওভার ভাংচুর: ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি জামায়াতের নয়

সারাদেশ

সাত দফা দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা দুপুর ২টায় হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সারা দেশ থেকে রাজধানীমুখী যাত্রা শুরু করেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে সমাবেশকে ঘিরে কুড়িল ফ্লাইওভারে ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দাবি করা হয়, সমাবেশে যোগ দিতে আসা জামায়াতের নেতাকর্মীরা টোল আদায়ের সময় ক্ষুব্ধ হয়ে ফ্লাইওভারে ভাঙচুর চালান। ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৪০ জনকে নিয়ে একটি পিকআপ টোল প্লাজায় আসে। পিকআপটি টোল বুথে এলে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে আগতদের তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে পাঞ্জাবি পরিহিত এক যুবক টোল প্লাজার ব্যারিকেড বার ভেঙে ফেলেন। এর অল্প সময় পরই প্লাজার কর্মীদের সঙ্গে তারা হাতাহাতিতে জড়ান। এ সময় টোল বুথের ভেতরে থাকা এক কর্মীকে মারধরও করেন পিকআপে থাকা কয়েকজন যুবক।

তবে ভিডিওটি যাচাই করে জানা গেছে, ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। এটি ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত পুরনো একটি নিউজ। সেটিকেই বিভ্রান্তিকরভাবে আজকের ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আজ শনিবার কুড়িল ফ্লাইওভারে কোনো ধরনের সহিংসতা বা হামলার ঘটনা ঘটেনি। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আগের সময়কার। বিষয়টি আমরা যাচাই করেছি, ভিডিওটি আজকের নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুরো এলাকা শান্তিপূর্ণ রয়েছে এবং পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো ভিডিও বা বার্তা শেয়ার না করার অনুরোধ করছি।’

এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজধানীতে অতিরিক্ত চার হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি মাঠে রয়েছে র‍্যাব-ডিবির কয়েক হাজার সদস্য। সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তার ঘাটতি নেই বলেই জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এম নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য পুরো শহরেই পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।’

ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (অপারেশন) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সমাবেশ ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়োগের পাশাপাশি থানা ও ফাঁড়ির সদস্যরাও নগরবাসীর নিরাপত্তায় কাজ করছেন। ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরাও মাঠে কাজ করছেন।’

র‍্যাবও রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এলিট বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব জানান, ‘সমাবেশস্থলের চারপাশে র‍্যাব সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক র‍্যাব সদস্য অবস্থান করছেন। যদি কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, র‍্যাব তা দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে।’

র‍্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *