আপত্তিকর ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন শরীয়তপুরের ডিসি ও সেই নারী

সারাদেশ

সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ঘিরে একটি বিতর্কিত ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে।

ভিডিওতে এক নারীর সঙ্গে ডিসির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু দৃশ্য ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। অভিযোগকারী ওই নারী দাবি করেছেন, ডিসি আশরাফ উদ্দিন তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীতে প্রতারণা করেন।

অন্যদিকে ডিসি আশরাফ উদ্দিন সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, ওই নারী তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করছিলেন এবং মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছিলেন। একপর্যায়ে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে তিনি পুরনো কিছু ব্যক্তিগত ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, অভিযোগকারী নারী টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সেলিনা ইসলাম লিজা, যিনি ঢাকার মিরপুরে স্বামী মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের সঙ্গে বসবাস করতেন। আর ডিসি আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর স্বামীর বড় বোনের জামাই। পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দুইজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় এবং তা প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়।

কিন্তু সময়ের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। অভিযোগ অনুযায়ী, ডিসির কথায় লিজা তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন। এরপরও ডিসি বিয়ের প্রতিশ্রুতি রাখেননি এবং বরং হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন লিজা।

ডিসি আশরাফ উদ্দিনের দাবি, লিজা বিভিন্ন সময় তাকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করেছেন। এমনকি ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েকবার টাকা দিতে বাধ্য হন তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে লিজা এক আইনজীবীর সহায়তায় আরও অর্থ দাবি করেন।

অন্যদিকে লিজার বক্তব্য, ডিসি তাকে ঠকিয়েছেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সংসার ভেঙে দিয়েছেন। একপর্যায়ে ওই নারী ডিসির বিরুদ্ধে এককালীন পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও মাসিক খরচ হিসেবে অর্থ দাবি করেন।

ঘটনার মধ্যস্থতায় থাকা শরীয়তপুরের এক আইনজীবী জানান, তিনি উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, “ওই নারী এক পর্যায়ে ডিসির সঙ্গে বিয়েতে অনীহা প্রকাশ করে অর্থ চেয়েছিলেন। ডিসি কিছু অর্থ দিলেও পুরো দাবি না মানায় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।”

আইনজীবীর মতে, ব্যক্তিগত ভিডিও বা ছবি ছড়িয়ে দেওয়া স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই ডিসি আশরাফ উদ্দিন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরের ডিসি হিসেবে যোগ দেন। তিনি ২৭তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

ঘটনার জেরে বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আসলাম হোসাইন জানান, ডিসি আশরাফ উদ্দিন ছুটির দরখাস্ত দিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *