আমরা বাংলাদেশের প্রায় সত্তর ভাগ মানুষ কৃষি এর উপর নির্ভর করে থাকি। আর আমাদের দেশের প্রায় আশি ভাগ মানুষ কৃষক। যা আমাদের জীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হল মাছ চাষ। মাছ চাষ আমাদের পূর্ব কাল থেকে চলে আসছে। আর এ কারনে মাছ চাষ এখনও আমাদের মধ্য রয়েছে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। যা আমরা আমাদের প্রয়োজন পূরন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের স্বাদু পানিতে ২৫০ টিরও বেশি প্রজাতির মাছ আছে। এছাড়া খাঁড়ি অঞ্চলে ও লোনা পানিতে কয়েকশ‘ প্রজাতির মাছ আছে। তবে চাষযোগ্য মাছগুলো হলো রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প, কমনকার্প, বিগহেড, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই পাঙ্গাশ এসব। এসব মাছের কিছু বিশেষ গুণাগুণ আছে। এসব মাছ খুব দ্রুত বাড়ে; খাদ্য ও জায়গার জন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না; পুকুরে বেশি সংখ্যায় চাষ করা যায়; পানির সব স্তর থেকে খাবার গ্রহণ করে, পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকে; খেতে খুব সুস্বাদু; বাজারে এসব মাছের প্রচুর চাহিদা আছে; সহজে রোগাক্রান্ত হয় না, চাষে লাভ বেশি হয়। এজন্য লাভজনকভাবে এসব মাছে চাষ করা যায় আনয়াসে। মাছ চাষ শুরু করার আগে প্রয়োজন হচ্ছে সঠিক সুষ্ঠু এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা।
মাছ চাষি হ্যাচারি থেকে যেসব পোনা সংগ্রহ করেন তার অধিকাংশই সরাসরি চাষ পুকুরে ছাড়ার উপযোগী নয়। চাষ পুকুরে ছোট পোনা সরাসরি ছেড়ে অনেক সময় চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এতে ব্যাপক হারে পোনা মারা যায়। এ কারণে পোনা ভালোভাবে নার্সিং করতে হবে। নার্সিং করার পর পোনা বড় ও টেকসই হলে গণনার মাধ্যমে পোনা মজুদ পুকুরে দেয়া যায় এবং পরবর্তীতে খাবার ব্যবস্থাপনার সাথে অন্যান্য ব্যবস্থাপনাও যথার্থ হতে হবে। একক চাষের ক্ষেত্রে বিশেষত শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া প্রভৃতি মাছের পোনা হ্যাচারি থেকে সরাসরি চাষ পুকুরে দিয়ে অনেক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইচ্ছেমতো বা পুকুরের জায়গার তুলনায় অধিক পরিমাণে পোনা ছাড়া আমাদের মৎস্য চাষিদের একটি প্রচলিত ত্রুটি। তাদের ধারণা বেশি পোনা ছাড়া হলেই বেশি উৎপাদন হবে। চাষের ধরন, অবকাঠামো, পানি বদলানোর সুবিধা, খাবারের ধরন, মাছ চাষের মেয়াদ, মাছের প্রজাতি এসব বিবেচনা করে পোনা মজুতের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ চাষি বা অভিজ্ঞ মৎস্য কর্মকর্তার কাছ থেকে তারা পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। বেশি পোনা নয় বরং পরিমিত পরিমাণে পোনা ছেড়ে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ।
নিবিড় পদ্ধতিতে বিশেষত ‘কার্প’ জাতীয় মাছ চাষ করা হয়। অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকাপ, আমেরিকান রুই-সহ ছয় প্রকার মাছ চাষ করা হয়। তা ছাড়া বাটা মাছও ছাড়া হয় তিনটি পর্যায়ে। একবিঘা পুকুরে প্রায় একহাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত চারাপোনা ছাড়া হয় বলে জানা গিয়েছে। উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের দু’টি পুকুরে নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে । এতে প্রতি বছর খরচ হয়েছে সত্তর হাজার টাকা । মাছ বিক্রি বাবাদ আয় হয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা।