মোদির সবুজসংকেত, ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে কি হতে যাচ্ছে…

আন্তর্জাতিক

জম্মু ও কাশ্মির প্রদেশের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার শোধ নিতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক হামলা করতে পারে ভারত। গোয়েন্দা তধ্যের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।

মঙ্গলবার ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারার। মঙ্গলবার রাজধানী ইসলামাবাদে মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দাসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, পেহেলগাম ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ ভারত এনেছে, তার জের ধরে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে দেশটি।”

সংবাদ সম্মেলনে আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই ‘স্বঘোষিত’ এবং ‘এককভাবে’ বিচারক, জুরি ও জল্লাদের ভূমিকা নেয় ভারত যা পুরোপুরি বেপরোয়া এবং পাকিস্তান ভারতের এই ভূমিকা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

আতাউল্লাহ বলেন, “পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসাবাদের শিকার এবং এই অভিশাপের যন্ত্রণা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে সক্ষম। আমারা বিশ্বের যে কোনো স্থানে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে এবং সব সময়ই এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই।” পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তের জন্য যদি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সেই কমিশনকে খোলা মনে সব ধরনের সহযোগিতা করতে পাকিস্তান প্রস্তুত রয়েছে— দাবি করে আতাউল্লাহ তারার বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত এমন এক পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অযৌক্তিকতা ও সংঘর্ষে পরিপূর্ণ; এবং এই পথ শেষ পর্যন্ত এই উপমহাদেশ সংলগ্ন অংঞ্চলগুলোর চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটাবে।”

“ভারত নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য তদন্ত এড়িয়ে যেতে চায়। দেশটির সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী— তা বোঝার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।”

“রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভারত সচেতনভাবে তার জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ে খেলছে। কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তার প্রভাব আমরা দেখছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক।”

ভারত যদি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান তার ‘সমুচিত’ জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আতাউল্লাহ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ইস্যুতে সজাগ থাকবে এবং যে কোনো উত্তেজনা বা হঠকারিতা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিণতির দায় ভারতের ওপর বর্তাবে।”

গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগাঁও জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলাকারীরা অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করে, আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। নিহতরা সবাই পুরুষ। ২২ এপ্রিলের এ হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।

ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সিন্ধু নদের পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও। হত্যাকারীদের ধরতে জম্মু ও কাশ্মিরে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে ভারতের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ২২ এপ্রিলের পর থেকে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার সংবাদও পাওয়া গেছে।

সূত্র : ডন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *